মাদারীপুর জেলায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবী অনেক আগে থেকে। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জেলাতে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উপাদান সংরক্ষণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার অবদান সংরক্ষণের দাবীকে সামনে রেখে মাদারীপুর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। পুরাতন ট্রেজারি ভবনে এই জাদুঘর অবস্থিত। মাদারীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ভবনটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষত মাদারীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত ও তৎকালীন মহকুমা ট্রেজারি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো মাদারীপুর জেলাতেও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাবে প্রশিক্ষণ শুরু করা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত এগিয়ে আসেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র তুলে দেন। প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেজারি হতে অস্ত্র নিয়ে যেতেন ও প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেজারিত অস্ত্র রেখে যেতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মহকুমা প্রশাসকের এই সাহসী ভূমিকার ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা নিয়ে যায় ও প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। একই সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্রেজারি ভবন দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই ভবন পুনরায় ট্রেজারি ভবন হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে জেলা কালেক্টরেট শকুনী লেক পাড় হতে স্থানান্তরিত হয় প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বর্তমান স্থানে চলে যায়, ফলে জেলা ট্রেজারি নতুন কার্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়। কালক্রমে পুরাতন ট্রেজারি ভবন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয় ও বেদখল হয়ে যায়। এই ভবন সংরক্ষণের জন্য অনেক আগে থেকেই মাদারীপুর জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে দাবী উঠেছিল। ৩১ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে মাদারীপুর জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন এর সার্বিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: নাজমুল ইসলাম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন কর্তৃক জাদুঘর স্থাপনের ফলে ভবনটিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।